পাঠ-৪ : শারীরিক সক্ষমতায় ব্যায়ামের প্রভাব :

নবম-দশম শ্রেণি (দাখিল) - শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা - শারীরিক সক্ষমতা | NCTB BOOK

শারীরিক সক্ষমতার জন্য ব্যায়াম অপরিহার্য। ব্যায়াম না করলে কখনো শারীরিক সক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়। সেজন্য সব বয়সের মানুষের নিয়ম মোতাবেক নির্দিষ্ট ব্যায়াম করা প্রয়োজন। ব্যায়ামের প্রভাবে শরীরের ভিতর বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয় যা শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের প্রভাবে শরীরের ভিতর যে পরিবর্তন হয় তা এখানে তুলে ধরা হলো—

১. হৃৎপিণ্ডের (Heart) পেশি শক্তিশালী হয় : খেলাধুলা বা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায় ফলে হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে হৃৎপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী ও নীরোগ হয় । এরূপ হৃৎপিণ্ডকে “অ্যাথলেটিক হার্ট” বলে।

২. হৃৎপিণ্ডে রক্ত সঞ্চালন করার ক্ষমতা বাড়ে : একজন সাধারণ মানুষের হৃৎপিণ্ড প্রতি মিনিট ১৩০ মিলিলিটার রক্ত সঞ্চালন করে। খেলাধুলা বা ব্যায়াম করার সময় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ডের সঞ্চালন করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এতে হৃৎপিণ্ড সবল ও কর্মক্ষম হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

৩. পালস রেট (Pulse rate) বৃদ্ধি পায় : একজন সাধারণ মানুষ পরিশ্রম করলে তার পালস রেট বেড়ে যায়
পুনরায় স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগে। ফলে ক্লান্তি সহজে দূর হয় না। অপরদিকে একজন ভালো
খেলোয়াড় যখন খেলাধুলা বা ব্যায়াম করে তখন তার পালস রেট বেশি বাড়ে না এবং দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ফলে তার ক্লান্তি তাড়াতাড়ি দূর হয় ।

৪. রক্ত চলাচল বাড়ে : খেলাধুলা বা ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। ফলে সাধারণ মানুষের চেয়ে খেলোয়াড়দের মাংসপেশি, হৃৎপিণ্ড ইত্যাদির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি ও সবল হয়।

৫. রক্ত কণিকা : রক্তে তিন ধরনের কণিকা থাকে—
ক. লোহিত কণিকা খ. শ্বেত কণিকা গ. অণুচক্রিকা

ক. লোহিত কণিকা : রক্তে লোহিত কণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে । এক ঘন মিলিলিটার রক্তে পুরুষদের রক্তের ক্ষেত্রে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ এবং মহিলাদের রক্তে প্রায় পঁয়তাল্লিশ লক্ষ লোহিত কণিকা থাকে। এটি অস্থি মজ্জায় উৎপন্ন হয় ও ১২০ দিন পর প্লীহায় বিনষ্ট হয়। ব্যায়াম করলে লোহিত কণিকার সংখ্যাও বেড়ে যায় ও বেশি দিন বাঁচে। এটি হিমোগ্লোবিনের সহায়তায় দেহের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. শ্বেত কণিকা : আমাদের শরীরে রক্তে শ্বেত কণিকার সংখ্যা অনেক কম। এক মিলিলিটার রক্তে ছয় থেকে আট হাজার শ্বেত কণিকা থাকে। এরা বর্ণহীন ও নিউক্লিয়াসযুক্ত। এরা সাধারণত ১২-১৩ দিন বেঁচে থাকে। ব্যায়াম করলে এরা বেশিদিন বাঁচে ও সংখ্যা বেড়ে যায়। শ্বেতকণিকা রক্তে প্রবেশকারী জীবাণুকে ঘিরে ধরে বিনষ্ট করে এবং দেহকে রক্ষা করে। ফলে শারীরিক সক্ষমতা মজবুত ও শক্তিশালী হয় ।

গ. অণুচক্রিকা : অণুচক্রিকা দেখতে ডিম্বাকার ও বিভিন্ন আকৃতি বিশিষ্ট অনেকটা ডিসকের মতো দেখতে। দেহের বৃহদাকার কোষ ভেঙ্গে অণুচক্রিকা সৃষ্টি হয়। দেহের কোনো স্থানে ক্ষত হলে সেখানে ৩ মিনিটের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে।

 

৬. শ্বাস প্রশ্বাস (Respiration) : খেলাধুলা ও ব্যায়াম করার সময় ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাস গ্রহণ করতে হয়। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন গ্রহণ ও প্রশ্বাসের সাথে কার্বন ডাইঅক্সাইড বের হয়ে যায়। ঘন ঘন শ্বাস প্রশ্বাসের ফলে বুকের প্রসারতা বৃদ্ধি পায়। ফলে শারীরিক ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।

৭. মাংসপেশি (Muscle) : শরীরে বিভিন্ন ধরনের মাংসপেশি থাকে। খেলাধুলা ও ব্যায়ামের ফলে মাংসপেশি সংখ্যায় বাড়ে না তবে আকৃতিতে বড় হয়, টিস্যুগুলো মোটা ও শক্তিশালী হয়। ফলে শারীরিক সক্ষমতাও অনেক বেড়ে যায়। ব্যায়ামের ফলে শরীরের মাংসপেশিতে যে বিভিন্ন পরিবর্তন বা বৃদ্ধি ঘটে তা শারীরিক সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করে।

 

কাজ-১ : ব্যায়ামের ফলে হৃৎপিণ্ডের যে পরিবর্তন ঘটে তা পোস্টার পেপারে লিখে দেয়ালে লাগাও ।
কাজ-২ : ব্যায়ামের ফলে রক্তে লোহিত কণিকা ও শ্বেত কণিকার কী পরিবর্তন হয় তা বিশ্লেষণ কর।



 

Content added || updated By
Promotion